সংবেদনের বৈশিষ্ট্য

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠকগণ, আশা করছি আপনারা সকলে অনেক ভাল আছেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে সংবেদনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
ছবি
আপনারা যারা সংবেদনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

প্রশ্নঃ 

সংবেদনের বৈশিষ্ট্য।
সংবেদনের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ।
সংবেদনের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি।

ভূমিকাঃ 

আমাদের সকল আচরণ জ্ঞান অভিজ্ঞতা ও কার্যকলাপের মূলে রয়েছে সংবেদন। আর সংবেদনের মূল উৎস হচ্ছে স্নায়ুতন্ত্র। ইন্দ্রিয় সমূহের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন বস্তু সম্বন্ধে মস্তিষ্কে সংযোগ স্থাপিত হয়। এ সংযোগ স্থাপিত না হলে বহির্বিশ্বের সম্বন্ধে কোনরকম ধারণা আমাদের থাকতো না। বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন জ্ঞান আহরণ করে বলে ইন্দ্রিয়গুলো জ্ঞানের দরজা বলা হয়। যদিও ইন্দ্রিয় বলতে চক্ষু কর্ণ নাসিকা জিহ্বা ও ত্বক এ পঞ্চ ইন্দ্রিয় কে আমরা বুঝে থাকি। কিন্তু আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা ইন্দ্রিয়ের মোট সংখ্যা দশটি থেকে ১১ টি বলে মনে করেন।

সংবেদনের বৈশিষ্ট্যঃ 

সংবেদনের এমন কতগুলো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে যার মাধ্যমে সহজেই একে অন্যকে মানসিক প্রক্রিয়া থেকে আলাদা করে নেওয়া যায়। নিচে সংবেদনের বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা করা হলো।

১। উদ্দীপক সংবেদন সৃষ্টির জন্য দায়ীঃ

উদ্দীপক ছাড়া সংবেদন সম্ভব নয়। উদ্দীপক একপ্রকার শক্তি। উদ্দীপক কোন ইন্দ্রিয় কে উদ্দীপিত করলে সে উদ্দীপনা অন্তরমুখী স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে সঞ্চালিত হতে সংবেদনের সৃষ্টি হয়। যেমন আলোক রশ্মি চক্ষুকে উদ্দীভূত করে এটা দৃষ্টিকর্তা এবং সংবিধানের উদাহরণ।

২। সংবেদনের গুণগত পার্থক্য রয়েছেঃ 

একেকটি ইন্দ্রিয়ের উত্তেজনা একটি বিশেষ ধরনের সংবেদন সৃষ্টি করে। এর কারণ হলো প্রত্যেকটি ইন্দ্রিয়ের বিশেষ ধরনের গরন এবং বিশেষ উদ্দীপকের প্রতি কার্যকরিতা। শ্রবণেন্দ্রিয় বিশেষ ধরনের কোষের জন্য এটি শব্দ উদ্দীপকের প্রতি সাড়া দিতে পারে। ঠিক তেমনি ভাবে চোখের বিশেষ ধরনের গরনের জন্য এগুলো আলোর প্রতি সাড়া দিতে পারে। এমনই ভাবে বিভিন্ন উদ্দীপক বিভিন্ন সংবেদনের সৃষ্টি করে।

৩। সংবিধানের তীব্রতার পার্থক্য রয়েছেঃ 

উদ্দীপকের তীব্রতার ওপর সংবেদনের তীব্রতা নির্ভর করে। উদ্দীপকের তীব্রতা কমলে সংবেদনের তীব্রতা কমে। আবার উদ্দীপকের তীব্রতা বাড়লে সংবেদনের তীব্রতা বাড়ে। যেমন-একটা মোমবাতির আলোর চেয়ে উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক বাতির আলোর তীব্রতা বেশি। ২৫ ওয়াট বাল্পের আলোর চেয়ে ১০০ ওয়াট বাল্বের আলোর তীব্রতা বেশি।

৪। সংবেদনের স্থায়িত্ব রয়েছেঃ 

উদ্দীপকের স্থায়িত্বের ওপর সংবেদনের স্থায়িত্ব নির্ভর করে। কোন উদ্দীপক কতক্ষণ স্থায়ী হবে তা নির্ভর করে উদ্দীপক যতক্ষণ পর্যন্ত ইন্দ্রিয় কে উত্তেজিত রাখবে তার ওপর। একটি মিউজিক কয়েক সেকেন্ড বাজানো হলে এবং অন্য একটি মিউজিক কয়েক মিনিট বাজানো হলে এখানে প্রথমটি চেয়ে দ্বিতীয় টির শব্দ সংবেদনের স্থিতিকাল বেশি হবে।
আরো পড়ুনঃ মনোযোগ কাকে বলে

৫। সংবেদনের ব্যাপকতাঃ 

কোন উদ্দীপক যতটুকু জায়গা জুড়ে অনুভূত হয় বা যতোটুকু জায়গা দখল করে সংবেদনা সে পরিমাণ জায়গা জুড়ে স্থায়ী থাকে। যেমন-আমি প্রথমে একটা এক তোলা বাড়ির দিকে তাকালাম পরে পাঁচতালা বাড়ির দিকে তাকালাম। এটা দৃষ্টিগত সংবেদন। প্রথমটি তুলনায় দ্বিতীয়টির ব্যাপ্টি অনেক বেশি।

৬। সংবেদনের স্পষ্টতাঃ 

সব সংবেদন এক রকমের নয়। কোন সংবেদন বেশি স্পষ্ট আবার কোন সংবেদন কম স্পষ্ট। যে সংবেদন চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে সেটি স্পষ্ট এবং যেটি প্রান্তে থাকে সেটি কম স্পষ্ট।

৭। সংবেদন সংকেত হিসেবে কাজ করেঃ 

সংবেদন পরিবেশের উদ্দীপক সমূহের প্রতি উপযোগী প্রতিক্রিয়া করার জন্য সংকেত হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় প্যাভলন এর চিরায়ত সাপিক্ষণ এর কথা উল্লেখ করা যায়। সাপিক্ষণ পরীক্ষণে দেখা গেছে কুকুরকে খাদ্য দেওয়ার পূর্বে একটি সুর বাজানো হলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই কুকুরটির মুখ থেকে লালা ক্ষরণ হতে থাকে। অর্থাৎ সুরটি খাদ্য সংকেত হিসেবে কাজ করে।

৮। সংবেদন সমতাঃ 

রাত্রিবেলা হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রথমে কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু পরে ধীরে ধীরে সবই দেখা যায়। আবার অন্ধকার কক্ষে হঠাৎ আলো জ্বলে উঠলে প্রথমে চোখ বন্ধ হয়ে আসে এবং কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু অল্প সময়েই সব পরিষ্কার হয়ে যায়, অভিযোজনই হল সংবেদন সমতা।

উপসংহারঃ 

উপরিক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, সংবেদন হচ্ছে পরিবেশ বা বহির্জগতের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের একটি প্রধান ও প্রথম শর্ত। সংবেদন প্রক্রিয়া মূলত উদ্দীপগ্রহণ প্রক্রিয়াকরণ ও ব্যাখ্যার জন্য বিশেষায়িত।
আরো পড়ুনঃ আবেগ কি

আমাদের শেষ কথা,

সংবেদনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে পুরোপুরি বিষয়ে আপনারা সম্পূর্ণ বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার পরিচিত জনদের সঙ্গে এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। সকলে ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url