ক্রায়োসার্জারি কি? ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার ও প্রয়োগ | ক্রায়োসার্জারি সুবিধা এবং অসুবিধা

ক্রায়োসার্জারি কি? ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার ও প্রয়োগ | ক্রায়োসার্জারি সুবিধা এবং অসুবিধা-আপনাদের মধ্যে অনেক মানুষ রয়েছে যারা অনেক সময় ক্রায়ো সার্জারি কি এবং ক্রায়ো সার্জারি কিভাবে প্রয়োগ করতে হয় এবং এর সুবিধা এবং অসুবিধা এ সকল বিষয় সম্পর্কে নানান জায়গায় সার্চ করেন। কিন্তু সঠিক তথ্য তেমনভাবে পান না।
ছবি
আজকের এই আর্টিকেলের মধ্যে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব ক্রায়োসার্জারি কি? ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার ও প্রয়োগ | ক্রায়োসার্জারি সুবিধা এবং অসুবিধা। তাহলে যদি আপনারা ক্রায়ো সার্জারি কি এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক। 

পেজ সূচিপত্রঃ ক্রায়োসার্জারি কি? ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার ও প্রয়োগ | ক্রায়োসার্জারি সুবিধা এবং অসুবিধা 

ক্রায়োসার্জারি কি?

ক্রায়োসার্জারি হলো এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় শরীরের অস্বাভাবিক বা রোগাক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করা যায়। গ্রিক শব্দ ক্রায়ো অর্থ হল বরফের মতো ঠান্ডা আর সার্জারি এর অর্থ হল হাতের কাজ এ দুটি শব্দ মিলে হয়েছে ক্রায় সার্জারি শব্দটি। ঐতিহাসিকভাবেই বেশ কিছু রোগের চিকিৎসার জন্য ক্রায়ো সার্জারি ব্যবহার করা হতো।
যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিপদজনক চর্ম সংক্রান্ত সমস্যাও রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালের দিকে মিশরীয়রা ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ক্ষত ও প্রদাহের চিকিৎসায় শীতল তাপমাত্রা ব্যবহার করত। জেমস আর নট কর্তৃক মাইনাস ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় লবণ পানিকে বরফের জমাকৃত করে ব্যবহার করার পদ্ধতি বর্ণিত হওয়ার মাধ্যমে ১৮৪৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম।

ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার শুরু হয়। তবে তাদের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারির ব্যাপক প্রয়োগ শুরু হয়। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে। শিকাগোর চিকিৎসা বিজ্ঞানী ক্রায়োসার্জারিতে প্রথম কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর ব্যবহার প্রবর্তন করেন এবং তারপর ক্রায়োসার্জারির কাজে কার্বন ডাই অক্সাইডের ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হতে থাকে।

১৯২০ সালের দিকে ক্রায় সার্জারিতে তরল অক্সিজেনের ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৫০ সালে ড.রে এ লিংটন ক্রায়োসার্জারিতে তরল লাইডোজেন প্রয়োগ করেন। আধুনিক ক্রায়োসার্জারির পথচলা শুরু হয় ডক্টর ইরভিং কুপার এর হাত ধরে। পরবর্তীতে অন্যান্য ক্রয়োজনিক এজেন্ট যেমন-নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, আর্গন, ইথাইল, ক্লোরাইড এবং ফ্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন ব্যবহার করে ক্রায়োসার্জিক্যাল চিকিৎসায় আরো উন্নতি সাধন করা হয়।

যে তাপমাত্রায় বরফ জমাট বাদে দেহকোষে তার চেয়েও নিম্ন তাপমাত্রায় ধ্বংসাত্মক শক্তির সুবিধাকে গ্রহণ করে ক্রায়োসার্জারি কাজ করে। এতে নিম্ন তাপমাত্রায় দেহ কোষের অভ্যন্তরস্থ বরফ ক্রিস্টালগুলোর বিশেষ আকার বা বিন্যাস কে ছিন্ন করে দূরে সরিয়ে দেয়া যায়।ক্রায়োসার্জারির ক্ষেত্রে সাধারন পৃথক পৃথকভাবে।

তরল নাইট্রোজেন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের তুষার আর্গণ এবং সমন্বিতভাবে ডাই মিথাইল ইথার ও প্রোপেন এর মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এদের কোনো কোনোটি ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার উদ্ভব ঘটায়।

ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার

  1. ওয়ার্ট মোল স্ক্রিন ট্যাগ সোলার কিরাটোস মটন্স নিউরোমা এবং ছোটখাটো চর্ম ক্যান্সার সময়ের জন্য ক্রায়ো সার্জারি ক্যাল চিকিৎসা দেয়া হয়।
আরো পড়ুনঃ ফাইভ জি কি
  1. বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ শারীরিক ব্যাধি যেমন-লিভার ক্যান্সার প্রোস্টেট ক্যান্সার লাং ক্যান্সার ওরাল ক্যান্সার সার্জিক্যাল সমুহের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
  2. মানব দেহের কোষ কলার কমল অবস্থা যেমন-প্লান্টার ফ্যাসিলিটিজ এবং ফিব্রমাকে ক্রায় সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।

চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি প্রয়োগ

চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি প্রয়োগের বহুবিধ সুবিধার হয়েছে।ক্রায়োসার্জারির মাধ্যমে রক্তপাতহীন অপারেশন সম্ভব-কারণ নিচে সুবিধা সময়ে বিশ্লেষণ করলেই এর সত্যতা নিম্নরূপ করা যাবে।
  1. ক্রায়োপ্রোবের সূচের প্রান্ত দিয়ে আক্রান্ত টিস্যু বা টিউমারের কোষ কে বরফ শীতল তাপমাত্রায় জমাটবদ্ধ করার জন্য তরল নাইট্রোজেন আর্গন বা অন্যান্য ক্রায়োজানিক এজেন্ট পৃথক পৃথকভাবে ওই স্থানে প্রবেশ করানো হয়। এগুলোর কোন কোনটি ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রার উদ্ভব ঘটায়। যার ফলে আক্রান্ত কোষ বা টিস্যুর পানি জমাট বাধ্য হয়ে সেটিকে একটি বরফখন্ডে পরিণত করে। অতঃপর পুনরায় ওই স্থানে ক্রায়োপ্রলেবের সাহায্যে হিলিয়াম গ্যাস প্রবেশ করিয়ে এই তাপমাত্রাকে ২০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠানো হয়। এতে আক্রান্ত কস বা টিস্যু টির বরফ গলে গিয়ে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আক্রান্ত স্থানে সুনির্দিষ্ট কোষ বা টিস্যু কে নিখুঁতভাবে চিহ্নিত করার জন্য আল্ট্রা সাউন্ড বা এমআরআই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। ফলে এর আশেপাশে থাকা সুস্থ কোষ গুলোর কোন ক্ষতি হয় না।
  2. ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রচলিত শল্য চিকিৎসার মত অতটা কাটাছেঁড়া করার প্রয়োজন হয় না।
  3. এর পাশে প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
  4. এ পদ্ধতিটি ধীরে ধীরে কেমোথেরাপি রেডিও থেরাপি এবং অস্ত্র পাচার চিকিৎসার জায়গা দখল করে নিচ্ছে। ফলে ক্যান্সার ও নিউরো রোগীদের কাছে দিন দিন এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  5. সকল ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসায় এ পদ্ধতি চিকিৎসকদের বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে। নিউরো সার্জারি এবং টিউমার বা ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় ক্রায়োথেরাপি পদ্ধতি বিশেষভাবে কার্যকর।

ক্রায়োসার্জারি এবং রেডিও থেরাপির মধ্যে পার্থক্য

ক্রায়োসার্জারি
  1. এথেরাপির ক্ষেত্রে রোগীকে তুলনামূলকভাবে কম ধকল সহ্য করতে হয়।
  2. এটি অনেক নিরাপদ পদ্ধতি ও প্রায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত।
রেডিও থেরাপি
  1. এথেরাপির ক্ষেত্রে রোগীকে অনেক বেশি ধকল সহ্য করতে হয়।
  2. এ থেরাপিতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

ক্রায়োসার্জারির সুবিধা

  1. ক্যান্সারের চিকিৎসায় অন্য সব পদ্ধতির চেয়ে ক্রায়োসার্জারি অনেক বেশি সুবিধা জনক। প্রকৃত সার্জারির চেয়ে এটি কম আক্রমণকারী চামড়ার ভেতর দিয়ে ক্রায়োপ্রলেব ঢোকানোর জন্য অতি ক্ষুদ্র সেজনের প্রয়োজন পড়ে।
  2. সার্জারির ক্ষেত্রে ব্যথা রক্তপাত এবং অন্যান্য জটিলতা সমূহকে ক্রায়োসার্জারিতে একেবারেই কমিয়ে আনা হয়।
  3. অন্যান্য চিকিৎসার চেয়ে এটি কম ব্যয়বহুল এবং সুস্থ হতেও কম সময় প্রয়োজন হয়।
  4. হাসপাতালে খুবই স্বল্প সময় অবস্থান করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালে থাকতেই হয় না।
  5. অনেক সময় লোকাল এনেস্থেশীয়ার মাধ্যমে ক্রায়োসার্জারি সম্পন্ন করা যায়।
  6. চিকিৎসকগণ শরীরের সীমিত এলাকায় ক্রায়োচারজিক্যাল চিকিৎসা দেন ফলে তারা নিকটবর্তী স্বাস্থ্যবান কোষগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।
  7. এর চিকিৎসাটি নিরাপদে বার বার করা যায় এবং সার্জারি কেমোথেরাপি হরমোন থেরাপি ও রেডিয়েশনের মতো স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসার পাশাপাশি করা সম্ভব।
  8. যেসব রোগীরা তাদের বয়স এবং অন্যান্য শারীরিক কারণে স্বাভাবিক সার্জারির ধকল নিতে অক্ষম তাদের জন্য ক্রায়োসার্জারি হলো আদর্শ।

ক্রায়োসার্জারির অসুবিধা

  1. ক্রায়োসার্জারির প্রধানতম অসুবিধা হলো দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতার অনিশ্চয়তা।
আরো পড়ুনঃ ব্যান্ডউইথকি
  1. ইমেজিং পরীক্ষা সমূহ এর মাধ্যমে চিকিৎসকগণ টিউমার সমূহ দেখে নিয়ে তার ক্ষেত্রে ক্রায়োসার্জারি কে কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে পারলেও এটি অণুবীক্ষণিক ক্যান্সার ছড়ানোকে প্রতিহত করতে পারে না।

আমাদের শেষ কথা,

ক্রায়োসার্জারি কি? ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার ও প্রয়োগ | ক্রায়োসার্জারি সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কিত সকল বিষয় সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url