সামাজিক সমস্যার কারণ

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠকগণ, আশা করছি আপনারা সকলে অনেক ভাল আছেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেল এর মধ্যে সামাজিক সমস্যার কারণ নিয়ে আলোচনা করব।
সামাজিক সমস্যার কারণ
আপনারা যারা সামাজিক সমস্যার কারণ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন সামাজিক সমস্যার কারণ জেনে নেওয়া যাক।

প্রশ্নঃ 

সামাজিক সমস্যার কারণ।
সামাজিক সমস্যার কারণ গুলো কি কি।
কি কি কারণে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
সামাজিক সমস্যার কারণ গুলো বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ 

প্রতিটি সমাজই সমস্যা মুক্ত হতে চাই। কিন্তু সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে হলে আগে জানতে হবে সমস্যার উৎস কোথায়। মূলত সমাজ এবং সামাজিক সমস্যা পরস্পর অতপ্রত ভাবে সম্পর্কিত। অপূর্ণতা হলো সমাজের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। কোনো সমাজেই এককভাবে পরিপূর্ণ নয়। সমাজবিজ্ঞানে এবং অপূর্ণতা সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হয়। সমস্যা না থাকলে সমাজ স্থবির হয়ে পড়তো। সমস্যা আছে বলে মানুষ সমাধান করার প্রচেষ্টা করে। আর এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানব সমাজ গতিশীল থাকে।
আরো পড়ুনঃ গণ যোগাযোগ কি

সামাজিক সমস্যার কারণঃ 

সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি পর্যালোচনা করে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির পিছনে যে কারণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত নিচে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

১। মূল্যবোধের অবক্ষয়ঃ

সামাজিক সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে মূল্যবোধের অপেক্ষায় কে দায়ী করা যায়। মূল্যবোধের অভাব হেতু মানুষ কোনটি গ্রহণযোগ্য, কোনটি অগ্রহণযোগ্য, কোনটি সঠিক, কোনটি সঠিক নয়, কোনটি সত্য, কোনটি মিথ্যা, কোনটি ভালো, কোনটি মন্দ এ পার্থক্য হারিয়ে ফেলে। অর্থাৎ মানুষ হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে। এরূপ পরিস্থিতিতে মানুষ যা ইচ্ছা তাই করতে প্রবৃত্ত হয়। মানুষ এভাবে নিজেকে সমস্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে। সমাজের ব্যক্তিবর্গ মূল্যবোধ শূন্য হয়ে গেলে সমাজের স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব ঘটে।

২। সামাজিক পরিবর্তনঃ

সামাজিক সমস্যার কারণ হিসেবে সমাজের পরিবর্তনকে দায়ী করা হয়। সমাজ সরল থেকে জটিল অবস্থায় পর্যবসিত হয়। সমাজ বিকাশের ধারায় সমাজ ক্রমশ জটিল রূপ ধারণ করে। আধুনিক শিল্প সমাজে মানুষের নানামুখী চাহিদার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যার উদ্ভব ঘটে।

৩। মানসিক শূন্যতাঃ

আধুনিক শিল্প সমাজে মানুষ নিজেকে সমাজ থেকে, অপরাপর ব্যক্তি থেকে এবং একপর্যায়ে নিজেকে নিজ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করতে শিখে। অর্থাৎ মানুষ বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে মানসিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং এভাবে সমাজে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

৪। মানসিক চাহিদার ঘাটতিঃ

প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে দার্শনিক অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, জগতের সকল মানুষ জন্মগতভাবে সমান। তিনি সকল মানুষের সম্পদ ভোগের সম অধিকারকে এ কথার মধ্য দিয়ে ইঙ্গিত করেছেন। মানুষ জন্মগতভাবে সমান হলেও সমাজের সম্পদ ভোগের সম অধিকার থেকে সে বঞ্চিত। মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ সমাজ জীবনের অন্যতম মৌলিক আদর্শ। কিন্তু মানুষ তার মানবিক চাহিদা পূরণে অপারগ। যখন সে মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য সমাজে সম্মনিতির পথে বাধা অতিক্রম করতে যায়, তখনই সামাজিক সমস্যার উদ্ভব ঘটে। সমাজ ব্যক্তিকে অপরাধবোধ, হীনমন্যতায় পর্যবসিত করে তোলে।

৫। সম্পদের অসম বন্টনঃ

আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সম্পদের অসম বন্টন। সম্পদের অসম বন্টনের ফলশ্রুতিতে সমাজে ধনী দরিদ্র বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। সমাজে সন্ত্রাস, অপরাধ, দুর্নীতির ন্যায় সামাজিক সমস্যার জন্য সম্পদের অসম বন্টন বিষয়টি বিশেষভাবে দায়ী।

৬। অতিরিক্ত জনসংখ্যাঃ 

বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের প্রচার মাধ্যমে অতিরিক্ত জনসংখ্যা কে সামাজিক সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। চীনে এক সন্তান নীতির প্রবর্তন এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদনের ক্ষেত্রে সহ সমাজ জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

৭। প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ 

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মুহূর্তের মধ্যে শত শত বছরের গড়ে তোলা সমাজ ও সভ্যতা ধুলিস্যাৎ হয়ে যেতে পারে। সুনামির আঘাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আফ্রিকার দক্ষিণ অঞ্চল পর্যন্ত জনজীবন বিপর্যয় করে তুলেছে। সরকারিভাবে ৩ লাখ মৃতের সংখ্যায় নির্দেশ করে, বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে স্বামী সন্তান মা বাবা হারানোর আর্তনাদের বিষাদ ধনী। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মানুষ তার স্বজন ঘরবাড়ি জীবিকার উপায় বেঁচে থাকার পরিবেশ সহ অনেক মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে ফেলেছে। মানুষ সবকিছু হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে ছুঁয়ে নক্ষত্রের আলো দেখে। সে জানেনা কোথায় যাবে কার কাছে যাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এভাবে মানুষের সবকিছু কেড়ে নিতে পারে। ফলশ্রুতিতে সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হয় এবং তা প্রকট আকার ধারণ করে।

৮। সামাজিক অসাম্যঃ 

সামাজিক অসমতার কারণে মানুষ সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যর সৃষ্টি করে। সামাজিক অসমতা সমাজে অপরাধ, দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচারের জন্ম দেয়, যা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।

উপসংহারঃ 

উপরের আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক সমস্যা মানব জীবনের সার্বিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে উন্নত জীবন জীবনমান লাভ বাধাগ্রস্ত করে। আর এ সামাজিক সমস্যার উৎস বহুমুখী। মূলত সমাজ সৃষ্টির সূচনা লগ্নে সমাজ কাঠামো ছিল সহজ। তাই তখন সামাজিক সমস্যা ছিল একমুখী। কালক্রমে সমাজ কাঠামো বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়ে জটিল রূপ নিয়েছে। তাই সামাজিক সমস্যা জটিল ও বহুমুখী রূপ নিয়েছে।
আরো পড়ুনঃ জনমতের গুরুত্ব

আমাদের শেষ কথা,

সামাজিক সমস্যার কারণ সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে পরিপূর্ণ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে এবং ভালোভাবে সকলে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার পরিচিতদের সঙ্গে এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। এবং আপনাদের মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করবেন। তাহলে সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url