সমাজ কল্যাণ কি

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠকগণ, আশা করছি আপনারা সকলে অনেক ভাল আছেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে সমাজ কল্যাণ কি এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
সমাজ কল্যাণ কি
আপনাদের মধ্যে যারা সমাজ কল্যাণ কি এই বিষয় সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন সমাজ কল্যাণ কি এই বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

প্রশ্নঃ 

সমাজকল্যাণ কি?
সমাজকল্যাণের সংজ্ঞা দাও?
সমাজ কল্যাণ বলতে কি বুঝ?

ভূমিকাঃ 

মানবতাবাদের অনুপম অনুভূতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দানশীলতা মানুষকে বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করতে অনুপ্রাণিত করেছে। ফলে সুপ্রাচীনকাল থেকে মানুষ অসহায়, ক্ষুধার্ত ও দুর্দশাগ্রস্থদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে। প্রসারিত করেছে দানের হস্ত; খুলে দিয়েছে ধনভান্ডার। আর এভাবে দানশীলতার ভিতর দিয়ে শুরু হয় সমাজ কল্যাণের যাত্রা। কালের পরিক্রমায় সমাজ কল্যাণ আজ দানশীলতা পেরিয়ে শিল্প বিপ্লব দত্তর সমাজের জটিল সমস্যাধীর সমাধানে নতুন রূপ পরিগ্রহ করেছে। সমাজকর্ম আজ পরিণত হয়েছে মানুষের আর্থ মনোসামাজিক সহ সকল সমস্যার সমাধানের একটি সুসংগঠিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে।
আরো পড়ুনঃ সমাজসেবা কি

সমাজ কল্যাণঃ 

সাধারণভাবে সমাজকল্যাণ বলতে সমাজের মানুষের জন্য কল্যাণকর কোন কার্যাবলী কে বুঝিয়ে থাকে। সমাজ হচ্ছে সাধারণ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সঙ্ঘবদ্ধভাবে বসবাসের জন্য কিছু লোকের সমাবেশ। আর কল্যাণ হল একটি ইতিবাচক শব্দ, যা কোন ভালো কাজকে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রাচীন দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজ কল্যাণকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। আর প্রাক শিল্প যুগে ধর্মীয় অনুশাসন ও মানব প্রেমে আগ্রহী হয়ে বিপদগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য গৃহীত কার্যাবলী সমাজ কল্যাণ। আধুনিক সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি নির্ভর সুসংগঠিত সাহায্য কার্যক্রম, যা মানুষকে নিজস্ব চেষ্টাই নিজের সমস্যা সমাধানের উপযোগী করে তোলে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ 

বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এবং অভিধানে সমাজ কল্যাণ প্রত্যয়টি বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে। নিচে কয়েকটি সংগা উল্লেখ করা হলোঃ- 

সমাজ কল্যাণের সংক্ষিপ্ততম সংজ্ঞা দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞানী জারটড উইলসন ও জি. রাইল্যান্ড তাদের মতে,

এটি সমাজ কল্যাণ সকল মানুষের কল্যাণের জন্য সকল মানুষের সংগঠিত প্রচেষ্টা। এ সংঘটিতে আধুনিক সমাজকল্যাণের দুটি বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। সকল মানুষের কল্যাণ এবং সমাজকল্যাণের সংগঠিত রূপ। তবে এতে সমাজকল্যাণের পেশাগত দিক অনুপস্থিত।

সমাজকর্ম বিশ্বকোষ গ্রন্থ অনুসারে,

সমাজকল্যাণ বলতে বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সকল সংঘটিত কার্যাবলী কে বোঝায় যার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বীকৃত সামাজিক সমস্যা গুলির প্রতিরোধ, দূরীকরণ বা সমাধানে সহায়তা করা অথবা ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির উন্নতি সাধন করা।

সমাজকর্ম বিশ্ব ঘোষের সংজ্ঞায় আধুনিক সমাজকল্যাণের কতিপয় বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
প্রথমত, বর্তমানে সমাজকল্যাণের কার্যক্রম সরকারি ও বেসরকারি দুটি ধারায় চালু রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান সমাজ কল্যাণের প্রাতিষ্ঠানিক ও সংঘটিত রূপ তুলে ধরা হয়েছে।
তৃতীয়ত, সমাজ কল্যাণের ত্রিমুখী ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
চতুর্থত, ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির কথা উল্লেখ থাকাই সমাজকর্মের পদ্ধতিগত দিকটি ফুটে উঠেছে। তবে মানুষের সুপ্ত ক্ষমতা বিকাশের কথাটি সংখ্যায় স্থান পায়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর সংজ্ঞা অনুযায়ী,

সমাজ কল্যাণ বলতে শুধুমাত্র বিশেষ জীবনের উন্নতি কে বোঝায় না। সামগ্রিকভাবে দৈহিক মানসিক ও সামাজিক প্রগতির মোট বিকাশ কে বোঝায়।

সমাজকর্ম অভিধানের সংজ্ঞা অনুযায়ী,

সমাজকল্যাণ হচ্ছে জাতীয়ভাবে গৃহীত কর্মসূচি মঙ্গলা ব্যবস্থা ও সেবা ব্যবস্থা যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করে যা সামাজিক জীবনের জন্য অপরিহার্য।

স্কিডমোর ও থ্যাকারে বলেন,

ব্যাপক অর্থে সমাজ কল্যাণ হচ্ছে এমন এক ব্যবস্থা যা শারীরিক মানসিক আবেগীয় আত্মিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন সহ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বার্ষিক কল্যাণ ও উপকার সাধনের বহুমুখী ব্যবস্থা করে।

সমাজকল্যাণের বহুল পরিচিত ও বিজ্ঞানসম্মত সংজ্ঞা দিয়েছেন আমেরিকার বার কোলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়াল্টার আর্থার ফিডল্যান্ডার-তিনি তার ইন্ট্রোডাকশন টু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার গ্রন্থে বলেন,

সমাজকল্যাণ হল সমাজসেবা ও প্রতিষ্ঠানের এমন এক পরিকল্পিত ও সংগঠিত পদ্ধতি যা ব্যাক্তি এবং দলকে সন্তোষজনক স্বাস্থ্য এবং জীবনমান লাভ এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ক অর্জনের সহায়তা করে, এটি তাদের পূর্ণ ক্ষমতার বিকাশ সাধন করে পরিবার ও সমষ্টির প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নতি লাভ করতে সক্ষম করে তোলে।

Macarov এর মতে,

মানবীয় চাহিদার প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সারা হিসেবে সমাজ কল্যাণকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। 

এলিজাবেথ উই ক্যান্ডেল বলেন,

সমাজ কল্যাণ যেসব আইন কর্মসূচি সুযোগ-সুবিধা ও সেরা কার্যক্রম কে অন্তর্ভুক্ত করে সেগুলো জনসাধারণের কল্যাণে মৌলিক হিসেবে স্বীকৃতি সামাজিক প্রয়োজন পূরণ এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বিধানে উন্নত ভূমিকা পালনের নিশ্চয়তা বা ক্ষমতা দেয়।

আমেরিকার বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক রোনাল্ড সি. ফেডারিকো এর মতে, 

সমাজ কল্যাণ হলো সমাজ প্রবর্তিত সরকারি এবং বেসরকারি কার্যক্রম ও প্রচেষ্টা; যেগুলো সমাজের সদস্য এবং সুসংগঠিত সমাজ কাঠামোর অংশগ্রহণকারী হিসেবে ব্যক্তিবর্গকে কার্যকর ভূমিকা পালনের সাহায্য করে।

উপসংহারঃ 

পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ কল্যাণ একটি সংঘটিত পদ্ধতি। এটি সমাজের সব মানুষের সকল দিকের সমস্যার সমাধান করতে চাই, যার মাধ্যমে মানুষের সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ সাধন হবে। ফলশ্রুতিতে একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেখানে মানুষ নিজেরাই নিজেদের সম্পদ ও সামর্থ্যর সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে সক্ষম হবে।

আমাদের শেষ কথা,

সমাজ কল্যাণ কি এই বিষয়ে সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা পরিপূর্ণ বিষয়ে ভালোভাবে এবং পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এবং পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন এবং আপনাদের মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানানোর চেষ্টা করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর টেক ইনফো ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url